বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

নোবেল পুরস্কার ২০১১ বিজয়ী সুইডিস কবি টমাস ট্রান্সট্রোমারের কবিতা



গাজী সাইফুল ইসলাম
সুইডিস কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার পেলেন নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ২০১১। মি. ট্রান্সট্রোমার জন্মগ্রহণ করেন এপ্রিল ১৫, ১৯৩১ সালে। বর্তমান বয়স ৮০। তাঁর মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা আর বাবা ছিলেন সাংবাদিক। তিনি পড়াশোনা করেন সাহিত্য, ইতিহাস মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬ সালে গ্রাজুয়েশন করার পর তিনি একটি কিশোর সংশোধনাগারে কর্মজীবন শুরু করেন-মনোবিজ্ঞানি হিসেবে। বিশ্বের আরও অনেক কবির মতো ট্রান্সট্রোমারও একদিক থেকে ভাগ্যবান। প্রথম বই সেভেনটিন পোয়েমস তাঁকে সুইডিস সাহিত্যের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছিল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩। তাঁর সেভেনটিন পোয়েমস এর কবিতা সম্পর্কে ঔপন্যাসিক এবং সুইডিস পেন সংস্থার সভাপতি ওয়ালা লারসমো বলেছিলেন, ‘‘সত্য বলতে তাঁর কবিতা সাধারণ পাঠকের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন অনুভব-দীর্ঘ সময় ধরে তারা এমন কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।’’ কিন্তু প্রথম দিকের কুড়ি বছর ধরে লেখা ঐতিহ্যবাহী, উচ্চাভিলাষী প্রকৃতিবাদী চিন্তা থেকে তাঁর কবিতা ক্রমশ সরে আসে এবং জীবনের অন্ধকার ব্যক্তিগত দিকের উন্মোচন করে। বদ্ধ থেকে আরও বেশি উন্মুক্ত হয় তাঁর কবিতার স্তবক। তাঁ কাজ শূন্যের মধ্যে স্বাদ দেয় ভরা পিপের, বোঝার জন্য চালায় জোর প্রচেষ্টা এবং জন্মায় অজ্ঞেয় বস্তুর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। খুঁজে ফিরে সর্বোৎকৃষ্ট কিছু। যেমন:
‘‘আমি এমন স্থান
সৃষ্টি যেখানে কাজ করে তার সীমার বাইরে।’’


ট্রান্সট্রোমার দাঁর দ্য আউটপোস্ট কবিতায় চিন্তা উপহার দিয়েছেন যাতে রবীঠাকুরের, সীমার মাঝে অসীমের বাঁশি বাজানোর কথাই নতুন করে মনে আসে। তিনি তাঁর অনেক কবিতাতেই এমন ধর্মাশ্রয়ী চিন্তা উপহার দিয়েছেন।
সুইডেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কবির হাজার হাজার কবিতার বই বিক্রি হয়েছে তাঁর স্বদেশ| পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ২০টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে বেশিরভাগ বই ইংরেজিতে অন্যান্য ৬০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো: সেভেনটিন পোয়েমস (সতোরো কবিতা-১৯৫৪), দ্য হাফ ফিনিশড স্কাই ( ১৯৬২), উইন্ডোজ এন্ড স্টোনস (১৯৭২), পাথস (পথসমূহ-১৯৭৩), বাল্টিকস (১৯৭৪), ফর দ্য লিভিং এন্ড দ্য ডেড ( জীবনযাপন এবং মৃতের জন্য-১৯৯৫),  নিউ কালেক্টেড পোয়েমস (১৯৯৭), দ্য হাফ ফিনিশড হেভেন (২০০১), দ্য গ্রেট অ্যানিগমা: নিউ কালেক্টেড পোয়েমস (নিউ ডিরেকশনস-২০০৩), দ্য সরো গুন্ডোলা (২০১০), নিউ কালেক্টেড পোয়েমস(ব্লাডাক্স বুকস-২০১১) উল্লেখ্য যে, ১৯৬২ সালে প্রকাশিত দ্য হাফ ফিনিশড স্কাই এর জন্য তিনি ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড- রানার-আপ হয়েছিলেন। টমাস ট্রান্সট্রোমার নোবেল প্রাইজ ছাড়া আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন ওগুলো হলো: দ্য আফটনব্ল্যাডটস লিটারেরি প্রাইজ, দ্য বনিয়ার অ্যাওয়ার্ড ফর পোয়েট্রি, দ্য নিউস্ট্যাড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, দ্য ওয়েভরালিডস প্রাইজ, জার্মানির দ্য পেত্রাকে প্রাইজ এবং সুইডেনের ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি ফোরাম অ্যাওয়ার্ড।
মি. ট্রান্সট্রোমার তাঁর আমেরিকান বন্ধু কবি রবার্ট ব্লি সহযোগিতার কারণে আমেরিকান সাহিত্যমোদিদের কাছে আগে থেকেই পরিচিত মুখ। তিনি মাঝেমধ্যেই সেদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিতা পড়তেন বন্ধুকে নিয়ে। দ্য হাফ ফিনিশড হেভেনসহ ট্রান্সট্রোমারের বেশিরভাগ কবিতার অনুবাদকও এই বন্ধু। স্ক্যান্ডেনেভিয়াতেও ট্রান্সট্রোমার দীর্ঘকাল ধরে সমালোচকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে আদৃত কবি। তাঁর কবিতায় প্রায়শই উপজীব্য হয়েছে ব্যক্তিগত বিষয় আশয় কিন্তু প্রকৃতির প্রশস্তি আধ্যাত্মবাদী    চিন্তাও এসেছে পাশাপাশি। রবিন রবার্টসন নামীয় আরও একজন কবি তাঁর কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর অনূদিত কাব্যগ্রন্থের নাম দ্য ডিলেটেড ওয়ার্ল্ড। তিনি লিখেছেন, ‘‘ তাঁর চিত্রকল্প বইয়ের পাতা থেকে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, তাই প্রথমবার যিনি তাঁর কবিতা পড়েন বা শুনেন তৎক্ষণাৎ তিনি খুবই জীবন্ত কিছুর স্পর্শ লাভ করেন।’’
তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ দ্য সরো গুন্ডোলা২০১০ সালে প্রকাশিত হয় দুটি ভাষায়। আমেরিকান সংস্করণটি বের করেছিল গ্রিন ইনটেজার বুকস আর বইটির অনুবাদক ছিলেন মাইকেল ম্যাকগ্রিফ মিকাইল গ্রাসেল। কবি তাঁরদ্য সরো গুনডোলা এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন ১৯৯০ সালের পর। ১৯৯০ সালে একটি বড় ধরনের ব্রেন স্ট্রোক মোকবিলা করেন তিনি। মরতে মরেতে বেঁচে যান। কিন্তু হারান কথা বলার শক্তি। কিন্তু কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার লিখতে শুরু করেন।স্বভাবজাত দীর্ঘ কবিতার পথে না গিয়ে লিখেন ছোট ছোট কবিতা। স্বদেশ সুইডেনেই কাব্যগ্রন্থটির বিক্রি হয়-৩০,০০০ কপি। নিচে টমাস ট্রান্সট্রুমারের তিনটি কবিতার অনুবাদ দেয়া হলো, নেয়া হয়েছেদ্য সরো গুনডোলা কাব্যগ্রন্থ থেকে।

নিরবতার এপ্রিল

বসন্ত তার গা এলিয়ে দিয়েছে জনবিচ্ছিন্নতায়।
মখমল-কোমল অন্ধকারের মতো
আমার অসহায়ত্ব হামাগুড়ি দেয় আমার পাশে
কোথাও তার প্রতিবিম্বের  প্রক্ষেপন ছাড়া।
সময়ের (এপ্রিলের) যত আলো
ছড়ায় ওই হলুদফুলগুলো।
আমার ছায়া আমাকে বহন করে
একটি ভেলা যেমন বহন করে তার কালো খাপ।
একটি কথাই বলতে চাই আমি,
ঔজ্জ্বল্য বরাবরই থেকে যায় অধরা
 তেজারতি দোকানে বন্ধক রাখা
রূপালঙ্কারের মতো।

সূর্যোজ্জ্বল সমতল

সূর্য মাথা ভাসায় বাড়িগুলোর পশ্চাৎ দিক থেকে
এরপর স্থিত হয় রাস্তার মাঝখানে
এরপর  ছড়িয়ে দেয় নিঃশ্বাস আমাদের ওপর
তার লাল বাতাসে।
ইন্সব্রোকে অবশ্যই আমি ছেড়ে যাবো তোমায়-
কিন্তু আগামীকাল
উদিত হবে প্রোজ্জ্বল এক সূর্য
অর্ধমৃত, বাদামী বনে
যেখানটায় আমরা চাষাবাদ করব
আর বেঁচে থাকব।

 মধ্যশীতে

একটি নীল আলো
বিকিরণ করে আমার পোশাক।
মধ্যশীতে,
ঠস ঠস শব্দ তুলে গুঁড়ো হয় বরফ,
আমি বন্ধ করি আমার চোখ।
একটি নিরব পৃথিবী
একটি ভাঙন
মৃতেরা যেখানে
পাচারকৃত হয়-সীমান্ত অতিক্রম করে।

কবিতার ইংরেজি অনুবাদ: মাইকেল ম্যাকগ্রিফ মিকাইল গ্রাসেল
বাংলানুবাদ : গাজী সাইফুল ইসলাম